ঢাকা   শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪ | ১১ কার্তিক ১৪৩১

গারো পাহাড় সীমান্তাঞ্চলজুড়ে বন্যহাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব শেষ হবে কবে ?

Daily Inqilab গারো পাহাড় সীমান্তাঞ্চল থেকে স্টাফ রিপোর্টার

২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৪৬ পিএম | আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৪৬ পিএম

ক্যাপশন: গাড়ো পাহাড়ের কালাপানি এলাকায় বন্যহাতি অবস্থান করছে। ছবি-এস. কে. সাত্তার।

 

গারো পাহাড় সীমান্তাঞ্চলে প্রায় ৩ যুগ ধরেই চলে আসছে হাতি-মানুষের দ্ব›দ্ব! অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এ সমস্যার কোন সমাধাই নেই! তাই হতাশ হয়ে পড়ে দেশের গোটা গারো পাহাড়ি জনপদের ভাগ্যহত লোকজন। এই দ্বন্দ্বের জেরে গত ৩ যুগে হাতির আক্রমণে শিশুসহ কমপক্ষে ৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে জানা গেছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ২ শতাধিক হতদরিদ্র লোক। অন্যদিকে, দৌড়ে পালাতে গিয়ে পাহাড়ি গর্তে পড়ে কিংবা মানুষের তৈরি বৈদ্যুতিক ফাঁদে আটকে কমপক্ষে ৩১টি হাতির মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। গারো পাহাড়াঞ্চলের বিশেষ করে ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী. নালিতাবাড়ী, কামালপুর, রউমারী, রাজিবপুর, হালুয়াঘাট ধোবউরাসহ পুরো গারো পাহাড় সীমান্তাঞ্চলে মানুষ ও হাতির দ্বন্দ্বের অবসান কীভাবে হবে-সে পথ খুঁজে পাচ্ছে না সংশ্লিষ্ট বন বিভাগ। জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড় থেকে দলছুট হয়ে ২০-২৫টি হাতি গারো পাহাড়ে প্রবেশ করে। আর ফিরে যায়নি। সেই থেকেই বন্যহাতিগুলো শেরপুর সীমান্তসহ গোটা গারো পাহাড় সীমান্তাঞ্চল চষে বেড়াচ্ছে ও বসবাস করে আসছে। এক সময় গারো পাহাড় সীমান্তাঞ্চল জুড়ে শাল ও গজারিসহ নানা প্রজাতির গাছে ভরপুর বনাঞ্চল ছিল। তখন বন্যপ্রাণীদের খাবারেরও অভাব ছিল না। কিন্তু আস্তে আস্তে বন কর্মকর্তা কর্মচারীদের যোগসাজশে বনের গাছ কেটে সাবাড় করে প্রকৃতি বন কেটে বনায়নের নামে বন পরিষ্কারের মাধ্যমে সামাজিক বনায়ন শুরু হয়। শত শত একর জমিতে চাষাবাদও আরম্ভ হয়। গড়ে উঠে জনবসতি। তখনই হাতির বিচরণ ক্ষেত্রে কমে যায়। ফলে সরকারী বনে দেখা দেয় হাতির খাদ্যাভাব। খাদ্যের সন্ধানে হন্যে হয়ে হাতির পাল বন থেকে বেরিয়ে লোকালয়ে নেমে আসতে থাকে। শুরু হয় হাতি ও মানুষের দ্বন্দ্ব সংঘাত। বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের তথ্য মতে,গারো পাহাড়ে এখন কমপক্ষে ৬০-৭০টির অধিক হাতি রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে হাতি সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে। সরেজমিনে গেলে ক্ষতিগ্রস্তরা দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, বনে এখন খাদ্যের সংকট থাকায় ক্ষুধার্ত ১০-১৫ টি করে বন্যহাতি ছাট ছোট পাল বেঁধে লোকালয়ে এসে দিন-রাত হানা দিচ্ছে। তাদের অভিযোগ-বাড়িঘর ভাঙচুর গোলার ধান চাল খেয়ে সাবাড় ও উঠতি আমন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করছে। অপর দিকে হাতির আক্রমণে প্রাণহানি হলে বনবিভাগ থানায় জিডি করার পরামর্শ দিয়েই দায় সারছে। ক্ষতিপূরণ আদায়েও পোহাতে হয় নানা ভোগান্তি অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। বন্যহাতি আক্রমণে নিহত পরিবারকে বন বিভাগ ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৩ লাখ টাকা, আহতদের চিকিৎসার জন্য ১ লাখ টাকা ও ফসলের ক্ষতির জন্য ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দেন। কিন্তু দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে এই ক্ষতিপূরণ পাওয়া নিয়েও ব্যাপক হয়রানি ও শঙ্কা রয়েছে। গারো পাহাড়ে বন্যহাতির আক্রমণে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৫৫ জন বলে জানা গেছে। আহত হয়েছে প্রায় দুই শতাধিক মানুষ। একই সময়ে ৩৩টি বন্যহাতি ও মারা পড়েছে বলে জানা গেছে। হাতি মৃত্যুর ঘটনায় মামলাও হয়েছে একাধিক। এই পরিস্থিতিতে মানুষ ও হাতি রক্ষায় প্রথমে হাতির প্রাকৃতিক আবাসস্থলগুলো সুরক্ষিত করতে হবে বলে সুস্থ বিবেক সম্পন্ন চিন্তাশীল মহল মনে করেন। এ প্রেক্ষিতে যেসব বনাঞ্চল দিয়ে হাতি চলাচল করে সেসব বনাঞ্চলের মানুষের বসতি কমিয়ে মসলা জাতীয় ফসলের চাষ করা যেতে পারে। ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদীও নালিতাবাড়ী উপজেলাসহ গরো পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকেরা বলেছেন, আমরা যুগযুগ ধরে পাহাড়েই বসবাস করে আসছি। আগে পাহাড়ে পশু পাখি জীব জন্তু জানোয়ারের প্রচুর খাদ্য ছিল। ফলে খাদ্যের সন্ধানে বন্যহাতি লোকালয়ে আসতো না। কিন্তু এখন প্রাকৃতিক শাল গজারিসহ পাহাড়ি বন কেটে বিদেশী কাঠ গাছের বনায়ন করায় হাতির খাদ্যের চরম অভাব দেখা দেয়ায় হাতির আক্রমণ অত্যধিক বেড়ে গেছে। ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর লোকদের মতে, হাতিগুলো ফসলের খেতে ও বাড়িঘরে হামলা করছে খাদ্যের জন্য। প্রাকৃতিক বন কেটে বনায়নের নামে বিদেশি কাঠ গাছের বনে খাবার কমে যাওয়ায় হাতিগুলো ক্ষুধার তাড়নায় লোকালয়ে এসে ছোটাছুটি করে পাহাড়ি মানুষের ঘরের ধান চাল ও খাবার পর্যন্ত খেয়ে যাচ্ছে।

 

‘মধুটিলা ইকোপার্কের রেঞ্জার অফিসার রফিকুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, আন্তঃদেশীয় সম্মেলনের মাধ্যমে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাটা তারের বেড়া না দেয়া পর্যন্ত হাতির আক্রমণ থেকে নিরাপদে থাকা সম্ভব নয়। ইকোপার্কের ভিতর ৭০ হেক্টর জমিতে দেশীয় প্রজাতি গাছের বাগান করা হয়েছে। ৬ অক্টোবর থেকে চার-পাঁচ দিন ইকোপার্কে হাতি অবস্থান করে গাছগাছলা খেয়ে সাবাড় করেছে। এই রিপোর্ট লেখার সময় ১৮ অক্টোবর হাতি কাটাবাড়ী এলাকায় অবস্থান করছিল বলে তিনি জানান।’
‘ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম রসেল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, গারো পাহাড় সীমান্তাঞ্চলে হাতি-মানুষের দ্ব›দ্ব অনেক দিনের পুরনো। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ থানায় জিডির পর বন বিভাগ থেকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়।’

 

‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খানের মতে, হাতি রক্ষায় প্রথমে হাতির প্রাকৃতিক আবাসস্থলগুলো সুরক্ষিত করতে হবে। যেসব জায়গায় হাতি চলাচল করে সেসব জায়গায় মানুষের বসতি কমিয়ে মসলা জাতীয় ফসলের চাষ করতে হবে। তাতে বন্য হাতির তান্ডব কমতে পারে।’

 

‘এ দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য, তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য ও শেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি মাহমুদুল হক রুবেল দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশ নায়ক তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা হাতি আক্রান্ত এলাকায়-গুলোয় ১০ জন ১০ জন করে অনেকটি কমিটি গঠন করে দিয়েছি। তাদেরকে দেশনায়ক তারেক রহমানের নির্দেশে ২৯ তারিখ সার্চ লাইট প্রযোনীয় ডিজেল-কেরোসিন প্রধান করা হবে মশাল ও সার্চ লাইট জ্বালিয়ে হাতির আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য। তিনি অবিলম্বে মানুষ-হাতি দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন। ’

 


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

বাগেরহাটে তাবলিগ জামাতের তিনদিন ব্যাপী জেলা ইজতেমা শেষ

বাগেরহাটে তাবলিগ জামাতের তিনদিন ব্যাপী জেলা ইজতেমা শেষ

ইসরাইলে হিজবুল্লাহর রকেট হামলা, নিহত ২ আহত ৭

ইসরাইলে হিজবুল্লাহর রকেট হামলা, নিহত ২ আহত ৭

আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাকারী যুবলীগ নেতা মিজান বাড্ডায় গ্রেপ্তার

আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাকারী যুবলীগ নেতা মিজান বাড্ডায় গ্রেপ্তার

নোবেল জয়ী নার্গেস মোহাম্মদীকে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড ইরানে

নোবেল জয়ী নার্গেস মোহাম্মদীকে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড ইরানে

ইরানকে পাল্টাপাল্টি হামলা না চালানোর আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের

ইরানকে পাল্টাপাল্টি হামলা না চালানোর আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের

আরো উত্তপ্ত হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য : আধুনিক এফ-১৬ যুদ্ধবিমান মোতায়েন যুক্তরাষ্ট্রের

আরো উত্তপ্ত হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য : আধুনিক এফ-১৬ যুদ্ধবিমান মোতায়েন যুক্তরাষ্ট্রের

লক্ষ্মীপুর-৪ রামগতি-কমলনগর কেন্দ্র থেকে পাঠানো চিঠি নিয়ে তোলপাড় বিএনপিতে

লক্ষ্মীপুর-৪ রামগতি-কমলনগর কেন্দ্র থেকে পাঠানো চিঠি নিয়ে তোলপাড় বিএনপিতে

বগুড়ায় সফরে যা দেখলেন বললেন শুনলেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক

বগুড়ায় সফরে যা দেখলেন বললেন শুনলেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক

শেরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যা চেষ্টার মামলায় আওয়ামীলীগ নেতা গ্রেপ্তার

শেরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যা চেষ্টার মামলায় আওয়ামীলীগ নেতা গ্রেপ্তার

ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানালো সউদী-মালয়েশিয়া

ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানালো সউদী-মালয়েশিয়া

নারীর প্রতি সহিংসতা সামাজিক ব্যাধি- সিলেটে উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ

নারীর প্রতি সহিংসতা সামাজিক ব্যাধি- সিলেটে উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ

২০০০ কিমি পাড়ি দিয়ে ইরানে হামলা শতাধিক ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানের

২০০০ কিমি পাড়ি দিয়ে ইরানে হামলা শতাধিক ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানের

সিংগাইরে মমতাজ-টুলুসহ ১০৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

সিংগাইরে মমতাজ-টুলুসহ ১০৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

শিবপুরে ট্রাকচাপায় সিএনজির ৬ যাত্রী নিহত

শিবপুরে ট্রাকচাপায় সিএনজির ৬ যাত্রী নিহত

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সফর সম্পর্কে অবহিত করলেন সেনাপ্রধান

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সফর সম্পর্কে অবহিত করলেন সেনাপ্রধান

যুক্তিসঙ্গত সময় দিতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে : ড. অলি

যুক্তিসঙ্গত সময় দিতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে : ড. অলি

দেশত্যাগের পর নিষেধাজ্ঞা দিলো দুদক!

দেশত্যাগের পর নিষেধাজ্ঞা দিলো দুদক!

রাউজান প্রেসক্লাব নির্বাচনে সভাপতি পদে ইনকিলাব প্রতিনিধির মনোনয়ন ফরম জমা

রাউজান প্রেসক্লাব নির্বাচনে সভাপতি পদে ইনকিলাব প্রতিনিধির মনোনয়ন ফরম জমা

মাগুরায় মহাসড়কে হঠাৎ ব্রিজের সাইড ওয়াল ভেঙে ঝুঁকিতে যানবাহন ব্যাপক যানজট

মাগুরায় মহাসড়কে হঠাৎ ব্রিজের সাইড ওয়াল ভেঙে ঝুঁকিতে যানবাহন ব্যাপক যানজট

আওয়ামী সরকারের চুক্তি ভঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে বিব্রত উপদেষ্টা-গভর্নর,পরোয়ানা জারির পর স্থগিত

আওয়ামী সরকারের চুক্তি ভঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে বিব্রত উপদেষ্টা-গভর্নর,পরোয়ানা জারির পর স্থগিত